মেডিকেলে চান্স পেলেন নৈশপ্রহরীর মেয়ে সাবিহা

ছোটবেলায় সবসময় অসুস্থ থাকতো সাবিহা। অসুস্থতার কারণে তাকে নিয়ে বারবার চিকিৎসকের কাছে ছুটে যেতে হয়েছে মাকে। চিকিৎসক বিভিন্ন যন্ত্র দিয়ে তাকে পরীক্ষা করতেন। তিনি কখনো ভাবিনি একসময় তিনিও এই যন্ত্রপাতি ধরার সুযোগ পাবেন। তবে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন যেন পূরণ হতে চলেছে সাবিহার। মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি।

সাবিহা আক্তার বাউবির দিনাজপুর উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্রের নিরাপত্তা প্রহরী সুজা মিয়ার একমাত্র মেয়ে। তিনি বগুড়া জেলার শীবগঞ্জ উপজেলার মানকৌর গ্রামের বাসিন্দা।১৫ বছর ধরে দিনাজপুর সুইহারি এলাকায় ছোট্ট একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন সুজা মিয়া। ভাইবোন মিলে চারজনের সংসারে বাবা যেখানে সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছেন, সেখান থেকে সাবিহা আজ তার স্বপ্নের উচ্চশিখরে। অন্য ছেলেমেয়েরা যখন কোচিং- প্রাইভেট নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, সাবিহা তখন ব্যস্ত ছিলেন পড়ার টেবিলে। অনেক কিছু না পাওয়া থেকে বাবার অল্প আয়ের টাকা দিয়েই মানিয়ে নিয়ে পড়ালেখা করেছেন। নিয়েছেন বড় ভাইয়ের সহযোগিতা।

সাবিহা পিইসি ও জেএসসিতে জিপিএ-৫, এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ এবং ২০২০ সালে এইচএসসিতে দিনাজপুর সরকারি কলেজ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।২০২০-২১ সেশনের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন স্কুলজীবনে সবসময় প্রথম স্থানে থাকা সাবিহা আক্তার।বড়ভাই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার সাজু মোল্লা সবসময় বোনের পেছনে ছিলেন ছায়া হয়ে। দশম শ্রেণি পর্যন্ত বড় ভাই ছিলেন একাধারে শিক্ষক, গাইড ও বন্ধু। কেননা অল্প বেতনে চাকরি করা বাবার সামর্থ্য ছিল না প্রাইভেট টিউটর কিংবা কোচিং করানোর।

ছোটবোন মেডিকেলে চান্স পাওয়ায় বেশ খুশি বড়ভাই সাজু মোল্লা। অভাবের সংসারে এতো দূর কীভাবে, জানতে চাইলে সাবিহা বলেন, মা-বাবার অনুপ্রেরণায় আজ আমি এতো দূর পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছি। মা সবসময় অনুপ্রেরণা দিতেন এগিয়ে যাওয়ার জন্য। তিনি বলেন, ‘অভাবের সংসার বলতে যেভাবে আছি সেখান থেকে আমাকে ভালো কিছু করতে হবে।’

সাবিহার বাবা সুজা মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, আমার মেয়ে এবার দিনাজপুর এম.আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে। চান্স পাওয়ার পর আমি আমার মেয়েকে বলেছি, সে যেন জনগণের সেবায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করে। সে যেন জনগণের ডাক্তার হতে পারে।

সাবিহার ব্যাপারে জানতে চাইলে তার স্কুলশিক্ষক চেহেলগাজী শিক্ষা নিকেতনের প্রধান শিক্ষক মকবুল হোসেন বলেন, সাবিহা খুব মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। সে তার শিক্ষকদের খুব সম্মান করতো। সে অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। সে তার পরিশ্রমের উত্তম ফল পেয়েছে।

কথা হয় সাবিহার শিক্ষক ও দিনাজপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আব্দুস সালামের সঙ্গে। তিনি জানান, সাবিহা ও তার গ্রুপের বেশ কয়েকজন ছাত্রী বেশ মেধাবী ছিল। তারা বেশিরভাগই দেশের বিভিন্ন মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। সাবিহাকে তার ভালো ফলাফলের জন্য অভিনন্দন জানান তিনি।