মাকে শেষবিদায় জানাতে এসে স্বামী-সন্তানকেও হারাল আদুরী

মায়ের মৃত্যুর খবরে মাকে শেষবিদায় জানাতে ঢাকা থেকে স্বামী ও শিশুসন্তান নিয়ে স্পিডবোটে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের চরডাঙ্গা গ্রামে আদুরী বেগম তার বাবার বাড়ি যাচ্ছিলেন। কিন্তু পথিমধ্যে দুর্ঘটনায় সাথে থাকা স্বামী ও শিশু সন্তানকেও হারাতে হলো তাকে। মাকে শেষ বিদায় জানাতে এসে স্বামী-সন্তানকেও শেষ বিদায় জানাতে হলো আদুরীকে।

নিজের শরীরে আঘাত, তার ওপর স্বামী-সন্তান হারানোর শোক। সব মিলিয়ে বাকরুদ্ধ আদুরী। পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন তাকে নিয়ে যান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। রোববার (০৩ মে) বেলা ১১টার দিকে ঘাটে গিয়ে একমাত্র জীবিত যাত্রী হিসেবে তাকেই পাওয়া যায়।

জানা যায়, মাদারীপুরের শিবচরে বালুবোঝাই বাল্কহেড ও স্পিডবোটের সংঘর্ষের ঘটনায় ২৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে আদুরী বেগমের স্বামী আরজু সরদার (৫০) ও ছেলে মো. ইয়ামিন সরদার (২) রয়েছে। এ ঘটনায় পাঁচজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। জীবিত পাঁচজনের মধ্যে আদুরী একজন। সোমবার (৩ মে) সকালে শিবচরের বাংলাবাজার ঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়নের পঁচা মাগুরা গ্রামের পান্নু সরদারের ছেলে আরজু সরদার (৫০) এর সাথে পার্শ্ববর্তী আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের চরডাঙ্গা গ্রামের ইকরাম মোল্লার মেয়ে আদুরী বেগমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে আরজু সরদার স্ত্রী আদুরীকে নিয়ে ঢাকাতেই থাকতেন। ঢাকায় ব্যবসা করতেন আরজু সরদার।

রোববার রাতে শাশুড়ি মনোয়ারা বেগম মারা যাওয়ার খবর শুনে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের চরডাঙ্গা গ্রামের শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন আরজু সরদার। কিন্তু বাড়ি পৌঁছানোর আগেই সন্তানকে নিয়ে চলে গেলেন পরপারে।আলফাডাঙ্গা উপজেলার চরডাঙ্গা গ্রামের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আরিফুল ইসলাম জানান, আরজু সরদারের শাশুড়ি মনোয়ারা বেগম মারা যাওয়ার খবর শুনে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের চরডাঙ্গা গ্রামের শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন আরজু সরদার।

তিনি আরও জানান, স্পিডবোটে পদ্মা নদী পার হওয়ার সময় তারা দুর্ঘটনার শিকার হন। ঘটনাস্থলেই আরজু সরদার ও তার শিশু সন্তান ইয়ামিন মারা যায়। গুরুতর আহত হন স্ত্রী আদুরী বেগম। আরজু সরদার ও ছেলে ইয়ামিনের মরদেহ বোয়ালমারীর শেখর ইউনিয়নের পঁচা মাগুরা গ্রামে আনা হচ্ছে।বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইস্রাফিল মোল্যা জানান, একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা। আরজু সরদার আমার ইউনিয়নের বাসিন্দা। সে দুই বিয়ে করলেও প্রথম স্ত্রীর ঘরে একটি মেয়ে ছিলো সেও আগেই মারা গেছে।

তিনি আরও জানান, দ্বিতীয় স্ত্রী আদুরী বেগমের ঘরে মো. ইয়ামিন সরদার নামে একমাত্র ছেলে সন্তান ছিল। তার সংসারে স্ত্রী আদুরী ছাড়া আর কেউ রইল না। আরজু সরদার ও ছেলে ইয়ামিনের মরদেহ বাড়িতে আনা হচ্ছে। মরদেহ আসার পর বোয়ালমারী থানা পুলিশের সাথে পরামর্শ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এদিকে পিতা-পুত্রর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো গ্রামে। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ।