বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে কনে অপহরণ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি

বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে কনেকে অপহরণ করে হত্যার করা হয়েছে। সোমবার বিয়ের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে কনে আইজাদা কানাতবেকোভা’কে (২৭) সশস্ত্র অবস্থায় তিন ব্যক্তি জোর করে তুলে নিয়ে যায়। তাকে একটি গাড়িতে ঠেলে প্রবেশ করায়। ধারণা করা হয়, ওই তিনজনের মধ্যে একজন তাকে জোর করে বিয়ে করতে চেয়েছিল। নিরাপত্তামূলক ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিদ্যুতবেগে ছড়িয়ে পড়ে। সবাই এই অপহরণ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কিন্তু যে গাড়িতে করে ওই কনেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। বুধবার (৭ এপ্রিল) তবে তারা পরিত্যক্ত গাড়িতে মিস আইজাদার মৃতদেহ উদ্ধার করেছে।

কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকের বাইরে একটি ক্ষেতের ভিতর একটি পরিত্যক্ত গাড়ির দিকে ছুটে যায় উদ্ধার অভিযানের একটি শেফার্ড কুকুর এবং এতে উদ্বেগ বৃদ্ধি পায়। সেখানে গিয়ে পুলিশ উদ্ধার করে মৃতদেহ ও ওই গাড়িটি। ওই যুবতীর অপহরণকারী এবং সন্দেহজনক খুনিকেও মৃত অবস্থায় পায় পুলিশ। তারা বলেছে, অপহরণকারী ও খুনি ছুরিকাঘাতে মারা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে নিজেকে নিজেই ছুরি মেরে সে আত্মহত্যা করেছে।

আইজাদার পরিবার বলেছে, ওই যুবককে চিনতো আইজাদা। তারা ওই যুবককে সাবধান করে দিয়েছিল, তাদের কন্যাকে বিরক্ত না করতে। ওই তিন অপহরণকারীর মধ্যে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। দেশটিতে জোর করে বিয়ের জন্য নারীকে অপহরণ একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে খবরে বলা হয়েছে। অনেকে মনে করেন, কনে অপহরণ কিরগিজদের একটি পুরনো রীতি। তবে কিছু গবেষক যুক্তি দেখান যে, এই ধারা মধ্য এশিয়ার এই দেশটিতে মাত্র কয়েক দশক আগে থেকে জনপ্রিয়তা

পেয়েছে। কিন্তু ২০১৩ সালে এই ধারাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে তারপরও তা অব্যাহত আছে। কারণ, দোষী ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে সাজা দেয়ার ঘটনা বিরল। আবার প্রতিশোধ নেয়ার ভয়ে নারীরা এসব বিষয়ে রিপোর্ট করতে চান না। জাতিসংঘের হিসাবে কিরগিজস্তানে প্রতি ৫ জন যুবতীর মধ্যে একজন অপহৃত হওয়ার পর তার বিয়ে হয়। যখনই কিরগিজস্তানে একজন কিশোর নির্দিষ্ট একটি বয়সে পৌঁছে তখনই পিতামাতা ও অভিভাবকরা তাকে বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। অনেক ক্ষেত্রে, বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারগুলোতে কনে অপহরণ একটি সস্তা ও দ্রুততর উপায়।

আইজাদাকে অপহরণ ও হত্যার প্রতিবাদে প্রায় ৫০০ মানুষ বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে। এ সময় তারা ‘শেম শেম’ বলে স্লোগান দিয়েছেন এবং মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন। বার্তা সংস্থা এএফপিকে স্থানীয় একজন সাংবাদিক মাহিনুর নিয়াজোভা বলেছেন, চুপচাপ থাকা একেবারে অসম্ভব। নারীর প্রতি যে সহিংসতা দেখছি, নারীদের অধিকারে যে ঘাটতি তাতে চুপ করে থাকা যায় না। এ ঘটনায় বিক্ষোভকারীদের ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী উলুগবেক শারিপোভ। বলেছেন, পুলিশি তদন্ত চলছে। তবে অন্যরা তার পদত্যাগ দাবি করেছেন। কারো কারো কাছে পোস্টারে লেখা ছিল, আইজাদাকে খুনের জন্য জবাব দেবে কে? এখনও কি খুন একটি রীতি হয়ে আছে? আইজাদার মৃত্যুকে একটি ট্রাজেডি আখ্যায়িত করে এর নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট সাদির জাপারোভ। তিনি এর জন্য পুরো দেশ বেদনাহত বলে মন্তব্য করেছেন।