প্রধান অতিথি ভিক্ষুক মা!

যেকোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হলে প্রয়োজন হয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা, প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানোসহ নানা ব্যস্ততা থাকে। চিন্তায় থাকতে হয়। এসবের তোয়াক্কা না করে লক্ষ্মীপুরে এক ব্যতিক্রম আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন এক মমতাময়ী মা। বিশেষ অতিথি অসহায় দুই মা। ভিক্ষা করে যারা সন্তানদের নিয়ে ধরণীর বুকে বেঁচে আছেন।

সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে লক্ষ্মীপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আয়োজিত ‘মায়ের ভাষায় মাকে লিখি’ চিঠি লেখা প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ওই তিন মমতাময়ী মা অতিথি ছিলেন। তাঁরাই ছিলেন অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ। ভিন্নধর্মী এ অনুষ্ঠানের আয়োজক ভাষার প্রদীপ ও মেঘ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ফাহাদ বিন বেলায়েত। এ সময় অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। পরে তাঁদের সন্তানদের জন্য শিক্ষা উপকরণ তুলে দেয় আয়োজকরা।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ৬৫ বছর বয়সী রহিমা বেগম। বিয়ে হলেও স্বামী ছেড়ে চলে গেছে। এরপর আর বিয়ে করেননি তিনি। বৃদ্ধ মাকে নিয়ে সদর উপজেলার লাহারকান্দি ইউনিয়নের লাহারকান্দি গ্রামে খালপাড়ে ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করেন। ঘরে উপার্জনক্ষম অথবা কোনো পুরুষ সদস্য না থাকায় ভিক্ষা করে মাকে নিয়ে বেঁচে আছেন।

বিশেষ অতিথি ববিতা রাণী দাস। বয়স আনুমানিক ৩৬ বছর। এক ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে ভিক্ষা করে জীবন চালাতেন তিনি। ভাষার প্রদীপের প্রতিষ্ঠাতা ফাহাদের অনুপ্রেরণায় এখন তিনি ভিক্ষা করা কমিয়ে মানুষের বাসায় কাজ করেন। শাক বিক্রি করে সংসার খরচ চালাচ্ছেন। তবুও বিপদে পড়ে মাঝে মধ্যে তিনি ভিক্ষা করতে বাধ্য হন। তাঁর স্বামী অন্যত্র বিয়ে করেছেন।

অন্য বিশেষ অতিথি শিউলি আক্তার। তিনি লাহারকান্দি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। প্রায় ১২ বছর আগে তার স্বামী মারা গেছেন। এরপর থেকে এক ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে খুব কষ্টে তাঁর সংসার চলছে। ভিক্ষা করেও তিনি ছেলেমেয়েকে পড়ালেখা করাচ্ছেন। তাঁর মেয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী।মেঘ ফাউন্ডেশনের সদস্য রিয়াদ হোসেনের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠাতা ফাহাদ বিন বেলায়েত, সবুজ বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাবু ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠক রাজীব হোসেন রাজু, ইয়াসিন আরাফাত হৃদয় প্রমুখ।

ভাষার প্রদীপ ও মেঘ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ফাহাদ বিন বেলায়েত বলেন, আমরা স্বেচ্ছাসেবী। সমাজের অসহায় মানুষদের নিয়েই আমাদের কাজ। তাদের জন্য কাজ করে এর মধ্যে আমি জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত হয়েছি। এ জন্য সমাজের অসহায় মানুষদের মুখে হাসি ফোটানোও আমাদের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। সেই থেকেই আমি এ অনুষ্ঠানে তিনজন মমতাময়ী মাকে অতিথি করে প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করা হয়েছে।

আয়োজকরা জানায়, ২০০৭ সাল থেকে ভাষার প্রদীপ সংগঠনের কার্যক্রম শুরু হয়। তখন থেকেই বাংলায় মোবাইল নম্বর বলতে পারলে ফ্লেক্সিলোড উপহার দিতেন প্রতিষ্ঠাতা ফাহাদ বিন বেলায়েত। এটি ছিল তাঁর ব্যতিক্রম উদ্যোগ। ২০১৪ সাল থেকে তিনি ‘মায়ের ভাষায় মাকে লিখি’ চিঠি লেখা প্রতিযোগিতা নামে আরেকটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগের সূচনা করেন। তখন থেকে প্রতিবছর ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতেই তিনি এ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন।

মাকে না বলতে পারা কথাগুলো লিখে ছাত্র-ছাত্রীরা মাসব্যাপী ভাষার প্রদীপ সংগঠনের সমন্বয়কের কাছে চিঠিগুলো জমা দেন। তবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে কাগজ-কলম বিনামূল্যে দিয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে এ কার্যক্রমের আয়োজন করেন। পরে চিঠিগুলো পর্যালোচনা করে ১০০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। তবে এবার অফলাইন ও অনলাইনের মাধ্যমে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাকে না বলা কথাগুলো চিঠিতে লিখে ভাষার প্রদীপ ফেসবুক পেজ (https:/www.facebook.com/BhasharProdip) ম্যাসেজ বক্সে পাঠাতে হবে। তবে হাতে লিখে স্ক্যান করে পাঠাতে হবে। লক্ষ্মীপুরসহ সারা দেশ থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য উম্মুক্ত প্রতিযোগিতা এটি।