ঘর নেই, সরকারি সাহায্যও পান না খাতুন নেছা

স্বামী মারা যাওয়ার পর শোক সইতে না পেরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন খাতুন নেছা। কোথায় যেন নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। এদিকে মা নিখোঁজ হওয়ায় তার একমাত্র ছেলে যতটুকু জমি ছিল বাড়িসহ বিক্রি করে পাকিস্তানে চলে যান। সেখানে গিয়ে মায়ের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখেননি তিনি।বলছিলাম- শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার পূর্ব ডামুড্যা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অসহায় খাতুন নেছার (৯০) কথা। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে সাহার বানু (৭০)।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২৫ বছর আগে খাতুন নেছার স্বামী আলী আহমেদ মারা যান। স্বামী মারা যাওয়ার পর শোক সইতে না পেরে খাতুন নেছা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। এর পর নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। নিখোঁজের ১৪ বছর পর তার সন্ধান মেলে। মেয়ে সাহার বানু মাকে উদ্ধার করে নিজের কাছে রাখেন। সাহার বানুর সংসারেও অভাব। মাকে নিয়ে অনেক কষ্টে আছেন তিনি।খাতুন নেছা এক বছর বয়স্ক ভাতা পেয়েছেন। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় তিন বছর ধরে তাও বন্ধ। বার্ধক্যের কারণে হাতের আঙুলের রেখা অস্পষ্ট হয়ে গেছে। তাই আঙুলের ছাপ না দিতে পারায় পাচ্ছেন না জাতীয় পরিচয়পত্রও। আর জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় মিলছে না ভাতাসহ অন্যান্য সরকারি সহযোগিতা।

খাতুনের মেয়ে সাহার বানু অতি দরিদ্র। এরপরও গর্ভধারিণী মা ও বৃদ্ধ স্বামী আবু ব্যাপারীকে ভিক্ষা করে খাওয়ান তিনি। তাছাড়া সাহারার ছেলেরাও মাঝে মধ্যে কিছু দেন। তাদের দিন কাটে অনাহারে অর্ধাহারে। বার্ধক্যের কারণে হাঁটতে পারেন না খাতুন নেছা। থাকছেন একটি জরাজীর্ণ ঝুপড়ি ঘরে। বৃষ্টি এলে ঘরে পানি ঢুকে হয়ে যায় স্যাঁতসেঁতে।

সাহার বানু জানান, তার বাবা মারা যাওয়ার পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে নিখোঁজ হন মা। পরে পটুয়াখালীর রাঙাবালী থেকে সাংবাদিকরা তাকে উদ্ধার করে তার কাছে দিয়ে আসেন। তখন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরকারি একটি বিধবা ভাতার ব্যবস্থা করে দিলেও জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় এখন তা আবার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন আর কিছুই পান না তিনি। জাতীয় পরিচয়পত্র করার জন্য চেষ্টা করছেন বলে জানান তিনি।

সাহার বানু আরও জানান, স্বামী অসুস্থ। কাজ করতে পারেন না। এদিকে মাও বিছানায় পড়া। ছোট একটি ঘরে সাহার বানুর ছেলেরা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে গাদাগাদি করে থাকেন। তাই তার মা মা থাকেন বাইরের একটি ঝুপড়ি ঘরে। সাহার বানুর ছেলেরা যা দেন, আর ভিক্ষার টাকা দিয়ে চলে তার সংসার। সরকারিভাবে কোনো ধরনের সহযোগিতা পান না। টাকার অভাবে মা ও স্বামীর চিকিৎসা করতে পারছেন না। মা যখন তখন পায়খানা-প্রস্রাব করেন। ঘর না থাকায় এখন বড় কষ্টে ঝুপড়ি ঘরে থাকেন মা।তিনি বলেন, ‘অনেক জায়গা-জমি ছিল আমাদের। সব সম্পত্তি বিক্রি করে আমার ভাই বহু বছর আগে পাকিস্তান চলে যায়। মার ঘর নেই, সরকার যদি একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে ভালো হয়।’

প্রতিবেশী ময়না বেগমসহ অনেকেই বলেন, খাতুন নেছার শুধু এই মেয়ে ছাড়া কেউ নেই। কষ্ট করে থাকে। বয়স্ক ভাতা ও একটি ঘর খুবই দরকার।পূর্ব ডামুড্যা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাসুদ পারভেজ লিটন বলেন, ‘আগে জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে বয়স্ক ও বিধবা ভাতা দেয়া হতো। এখন জন্ম নিবন্ধনে বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতা দেয়া যায় না। খাতুন নেছাকে তিন বছর আগে জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে বয়স্ক ভাতা দেয়া হয়েছিল। এখন জাতীয় পরিচয়পত্র লাগে। জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় বয়স্ক ভাতা দেয়া যাচ্ছে না। তবে অন্যান্য যে সাহায্যগুলো আছে তা দিতে পারবো, আশা রাখি। তাছাড়া তার ঘরের জন্য ইউএনও মহোদয়কে বিষয়টি জানাবো।’

ডামুড্যা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘সরকারি বয়স্ক ও বিধবা ভাতা নিতে হলে অবশ্যই তার জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা বাধ্যতামূলক। এটা না হলে এখন আর অনলাইন করা সম্ভব নয়। তবুও কী করা যায়, দেখছি।’ডামুড্যা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মর্তুজা আল মঈদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি। খাতুন নেছা যেখানে থাকেন আগামীকাল সেখানে যাব। সব দেখে শুনে যে ধরনের সহযোগিতা করা যায় আমরা করবো।’